বিটকয়েনের সুবিধা ও অসুবিধা

বিটকয়েন কি?

বিটকয়েন হলো একটি ভার্চুয়াল কারেন্সি বা ক্রিপ্টোকারেন্সি। যে কারেন্সি সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোন সেন্ট্রাল সিস্টেম নেই তাকে ভার্চুয়াল কারেন্সি বলে। ক্রিপ্টোকারেন্সির দুনিয়ায় বিটকয়েন হলো রাজা এবং বাকি কয়েনগুলো হলো মন্ত্রী। ২০০৯ সালে সর্বপ্রথম বিটকয়েন বিশ্ববাজারে উন্মুক্ত করা হয়। একে একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে তৈরি করার পেছনে কারণ হলো ডিসেন্ট্রালাইজেশন বা বিকেন্দ্রীকরণ। অর্থাৎ গতানুগতিক ধারায় টাকা তৈরি এবং নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে কারণে পুরো আর্থিক সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ এই ব্যাংকের কাছেই থাকে। অন্যদিকে ক্রিপ্টোকারেন্সি সিস্টেমে কোন সেন্ট্রাল ব্যাংক বা কোন নির্দিষ্ট মানুষের নিয়ন্ত্রণ নেই। এতে কোন দেশ বা সরকার ক্রিপ্টো লেনদেন ট্র্যাক করতে পারে না এবং বন্ধ করতে পারে না। এই সুবিধার জন্যই সময়ে সময়ে ক্রিপ্টো কয়েন রিলিজ হচ্ছে। এখন পর্যন্ত যত গুলো ভার্চুয়াল কয়েন রিলিজ হয়েছে তাদের মধ্যে বিটকয়েন সব থেকে বেশি জনপ্রিয়। এর পেছনের কারণ হলো মানুষ একে খুব তাড়াতাড়ি গ্রহণ করেছে। বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অতি দ্রুত অবিশ্বাস্য হারে এর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ১ বিটকয়েন সমান ২৪,৪৬৭ ডলার। একবার চিন্তা করে দেখেন আপনার কাছে ১ টি বিটকয়েন থাকা মানে আপনি ৩০ লক্ষ টাকার মালিক। যাইহোক, বিটকয়েন সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।

বিটকয়েন এর কাজ কি?

বিটকয়েন একটি কারেন্সি। টাকার যে কাজ বিটকয়েন ঠিক সেই সকল কাজেই ব্যবহৃত হয়। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

আর্থিক লেনদেনঃ অনলাইনে আর্থিক লেনদেন করার জন্য এই কয়েন ব্যবহার করা যায়। যেহেতু ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন হিসেব ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিচালিত হয় সেহেতু এর কোনো প্রমাণ থাকে না। সে কারণে যেখানে টাকা বা ডলার পৌঁছায় না সেখানে বিটকয়েন পৌঁছায়।

কেনাকাটাঃ বিটকয়েনের এই পপুলারিটির কারণে আজকাল অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের পেমেন্ট সিস্টেমে এই কয়েন যোগ করেছে। পর্যাপ্ত গোপনীয়তা বজায় থাকে বলে প্রকাশ্য কেনাকাটার সাথে সাথে গোপন কেনাকাটা করা যায়। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকার তাদের গোপন আর্থিক লেনদেন করার জন্য এই কয়েনের সাহায্য নেওয়া শুরু করেছে। যত বেশি ব্যবহার হচ্ছে তত বেশি বিটকয়েনের মার্কেট ভ্যালু বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ট্যাক্স থেকে মুক্তিঃ বিটকয়েন ট্র্যাক করা যায় না বলে এটি কোন ট্যাক্স আইনের আওতায় পরে না। আপনি যত কয়েনের মালিক হন তাতে কোন সমস্যা নেই। আপনাকে কোনো ট্যাক্স  দিতে হবে না এবং সরকার আপনাকে বাধ্য করতে পারবে না।

ডার্ক ওয়েবে পেমেন্টঃ ডার্ক ওয়েব একটি নিষিদ্ধ জিনিস। এখানে সকল ধরনের ইলিগাল আধুনিক অস্ত্র, হিউম্যান অর্গান, ক্রেডিট কার্ড, ভাড়াটে সৈন্য ইত্যাদি সহ আরও অনেক কিছু পাওয়া যায়। যেহেতু ডার্ক ওয়েব অনেক গোপন একটা বিষয় এবং বড় বড় দেশের সরকার এগুলো তদারকি করে সেহেতু এখান থেকে গোপনে কিছু ক্রয় করতে চাইলে বিটকয়েন একমাত্র অবলম্বন। অতএব, ডার্ক ওয়েব থেকে কোন কিছু ক্রয় করলে তার পেমেন্ট করার জন্য এই কয়েন ইউজ করা হয়। এতে ট্রানজেকশন ট্র্যাক হয় না এবং গোপনীয়তা বজায় থাকে।

আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণঃ আমরা আগেই জেনেছি গতানুগতিক অর্থ ব্যবস্থা একটি প্রতিষ্ঠান বা সরকারের কাছে জিম্মি থাকে। যারা প্রতিটি আর্থিক লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ আপনি যে টাকার মালিক তা কোথায় কীভাবে খরচ হচ্ছে তার হিসেব সরকার চাইলে আপনি দিতে বাধ্য। এতে সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরো দেশে কি পরিমাণ নোট থাকবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং চাইলেই কোন প্রচলিত নোট বন্ধ করে দিতে পারে। ধরুন আপনার কাছে ১০০ টি ১০০০ টাকার নোট আছে। হুট করে বাংলাদেশ ব্যাংক ১০০০ টাকার নোট নিষিদ্ধ করলো এবং পুরোনো টাকা আর জমা নিলো না। এখন এই বিপুল পরিমাণ টাকা আপনি কোন কাজেই ব্যবহার করতে পারবেন না। কিন্তু বিটকয়েনে এই ধরনের কোনো রিস্ক নেই। কারণ এটি পরিচালিত ব্লকচেইন পদ্ধতি ব্যবহার করে। যার ফলে বিটকয়েন ট্রানজেকশনের সময় কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে না গিয়ে এই কয়েনের সাথে জড়িত প্রত্যেকটি কম্পিউটারে চলে যায়। কম্পিউটার ক্যালকুলেশন করে তারপর ট্রানজেকশন ভ্যালিড করে তা ব্লকচেইনে জমা রাখে। এভাবে বিকেন্দ্রীকরণ করে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপ থেকে এই কয়েন মুক্ত থাকে।

বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে?

বিটকয়েন ক্রিপ্টোকারেন্সি পদ্ধতিতে ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করে। অর্থাৎ যখন কোন লেনদেন সংঘটিত হয় তখন এই নেটওয়ার্কে থাকা সকল কম্পিউটারে ডাটা চলে যায়। উক্ত কম্পিউটারগুলো সেই ডাটার উপর ভিত্তি করে বিটকয়েন অ্যালগরিদমের মাধ্যমে উক্ত লেনদেন সঠিক কিনা তা যাচাই করে। এই যাচাই করার সময় তা ব্লকচেইনে থাকে পূর্বের লেনদেন ডাটা চেক করে দেখে। যখন বিটকয়েন জমা থাকা কম্পিউটারগুলো ভেরিফাই করে যে লেনদেন সঠিক আছে তখন তা স্থায়ীভাবে ব্লক চেইনে যোগ হয়ে যাবে। এই প্রসেস সম্পন্ন করার জন্য প্রতিটি বিটকয়েন লেনদেনের একটি করে পাবলিক কি থাকে। যা একটি প্রাইভেট কি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। লেনদেন চলাকালীন ভেরিফিকেশনের জন্য এই কি প্রয়োজন পরে। ক্রিপ্টোকারেন্সি নেটওয়ার্কে মাইনিং অনেক প্রচলিত শব্দ। যার অর্থ করলে দাঁড়ায় খনি খনন করা। তো একজন মাইনারের কাজ হলো ব্লকচেইন প্রযুক্তির প্রতিটি ব্লকের বৈধতা যাচাই করা। আমরা জানি বিটকয়েন লেনদেন করার সকল ডাটা ব্লকচেইনে জমা থাকে। কোনো কারণে সেই ডাটা ইনভ্যালিড হলে গ্রাহকের কম্পিউটারে স্টোর থাকা কয়েন ট্র্যান্সফার হবে না। এই কারণে মাইনিং পদ্ধতি ইউজ করে ব্লকগুলোকে বৈধতা দেওয়া হয়। কেউ যদি কোন ব্লক হ্যাক করে ডাটা নষ্ট করার চেষ্টা করে তাহলে তার অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য ব্লক নষ্ট হবে। এ কারণে সহজেই কোথায় সমস্যা বের করে তা ঠিক করা যায়। ব্লকচেইন প্রযুক্তি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেখানে এখন শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যত এন্ট্রি হয়েছে তা দেখা যায় তবে তা পরিবর্তন করা যায় না। বিটকয়েনের ফাউন্ডার সাতোসি নাকামাতো বিটকয়েন সফটওয়্যার তৈরি করার সময় সাপ্লাই লিমিট দিয়েছিলো ২১ মিলিয়ন। এই পরিমাণ বিটকয়েন তৈরি হওয়ার জন্য অ্যালগরিদম ভিত্তিক একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে যার মতে ২১৪০ সাল পর্যন্ত বিটকয়েন সাপ্লাই চেইন চলার সম্ভাবনা আছে।

 

বিটকয়েন এর সুবিধা অসুবিধা

বিটকয়েনের বেশ কিছু সুবিধা ও অসুবিধা আছে যা নিচে বর্ণনা করা হলো। সুবিধা

  • শক্তিশালী নিরাপত্তাঃ নিরাপত্তার দিক দিয়ে বিটকয়েন সবার উপরে। কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সরকার নিয়ন্ত্রণ করে না জন্য এত কোন সিকিউরিটি সমস্যা হয় না।
  • এক্সট্রা চার্জ নেইঃ বিটকয়েন লেনদেন করার জন্য কোন অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হয় না।
  • ওপেনসোর্সঃ এটি একটি ওপেনসোর্স প্রোজেক্ট। অর্থাৎ বিটকয়েন সার্ভিস আপনি একদম ফ্রি তে ব্যবহার করতে পারবেন, এখানে কোন গোপন ফি নেই।
  • গ্লোবাল সাপোর্টঃ ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপি বিটকয়েন বৈধতা পাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে সব ধরনের কেনাকাটা করার জন্য মানুষ এই কয়েন সিস্টেম ইউজ করবে।
  • দ্রুত ট্রানজেকশনঃ Peer-To-Peer কানেকশন ইউজ করে ট্রানজেকশন হয় জন্য অনেক দ্রুত গতিতে কয়েন এক ওয়ালেট থেকে অন্য ওয়ালেটে ট্র্যান্সফার হয়।

অসুবিধা

  • অনেক দেশে অবৈধঃ বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশে বিটকয়েন তথা ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে লেনদেন করা অবৈধ। এটি ব্যবহারের কারণে আপনি জেলেও যেতে পারেন।
  • রিস্কিঃ ধরুন কোন কারণে ট্রানজেকশন অসম্পূর্ণ হয়ে গেল। তখন কিন্তু আপনার ওয়ালেট থেকে সেন্ড করা কয়েন আর ফেরত পাবেন না। অতএব প্রতিটি লেনদেন অনেক সতর্কতার সাথে করতে হয় যা অনেক রিস্কি।
  • রিকভারি করা যায় নাঃ বিটকয়েন কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে থাকে। কোন কারণে সে ডিস্ক নষ্ট হয়ে গেলে কোন ভাবেই কয়েন পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয় না।
  • অস্থিতিশীল বাজার মূল্যঃ মার্কেট ট্রেন্ডের উপর নির্ভর করে বিটকয়েনের দাম কবে এবং বারে। অর্থাৎ বিটকয়েনের মূল্যের স্থিতিশীলতা নেই।

বিটকয়েন অনেক প্রচলিত কারেন্সি। যেভাবে এটি পুরো সমাজকে লিকুইড মানির দিকে নিয়ে যাচ্ছে তাতে খুব বেশি দিন লাগবে না আমরা ক্যাশ লেস সোসাইটিতে প্রবেশ করে ফেলব।